চরম দারিদ্রকে উপেক্ষা করে মায়ের অনুপ্রেরণায় এগিয়ে চলেছেন যাদবপুরের পূজা

চরম দারিদ্রকে উপেক্ষা করে মায়ের অনুপ্রেরণায় এগিয়ে চলেছেন যাদবপুরের পূজা






শৈশবে বাবাকে হারিয়েছিলেন দুর্ঘটনায়। তারপর থেকেই জীবনে একমাত্র অবলম্বন তাঁর মা। অন্যের বাড়িতে আয়ার কাজ করে সংসার চালানো মায়ের স্বপ্ন তাঁকে প্রতিষ্ঠিত ফুটবলার হতে দেখা। তাই হয়তো পূজা কর্মকারের মধ্যে রয়েছে ব্যতিক্রমী এক জেদ।

বৃহস্পতিবার বিকেলে কলকাতা মহিলা ফুটবল লিগের উদ্বোধনী ম্যাচে তালতলা দীপ্তি সংঘের হয়ে হ্যাটট্রিক করলেন দলের অন্যতম স্ট্রাইকার পূজা। ম্যাচের শেষে যাদবপুরের লড়াকু মেয়ের মুখে মায়ের কথা। মায়ের উৎসাহ আর আত্মত্যাগ তাঁকে সাফল্যের সরণিতে পৌঁছে দিয়েছে। পূজা বলছেন, ‘‘শৈশবে বাবা’কে হারানোর পর মা-ই আমার একমাত্র অনুপ্রেরণা। এক সময়ে মা-ও কবাডি খেলত। কিন্তু অনুকূল পরিবেশ ও আর্থিক সহায়তরা অভাবের জন্য শেষপর্যন্ত খেলা ছেড়ে দিতে হয়েছিল। তাই আমাকে দিয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে চায়।’’ কিন্তু শুধু ফুটবলার নয়, পূজার মায়ের আরও এক লক্ষ্য যে, মেয়ে যেন পড়াশুনোটাও সমানভাবে করে যান। পূজা এখন স্নাতক স্তরে পড়াশুনো করছেন। তিনি বলছিলেন, ‘‘ফুটবল এই মুহূর্তে আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তার পাশাপাশি পড়াশুনাও চালিয়ে যেতে হবে। কারণ, পড়াশুনো না করলে চাকরি পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। আর আর্থিক প্রতিকূলতা কমানোর জন্য চাকরির ভীষণ প্রয়োজন।’’ বাংলার মহিলা ফুটবলারদের মধ্যে পূজা হয়তো ব্যতিক্রম এই কারণেও। কারণ, অধিকাংশ মহিলা ফুটবলারই দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে পড়াশুনো থামিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন।
মায়ের হাত ধরেই পূজ়া প্রথম তাঁর কোচ রতন সোমের কাছে ভর্ত্তি হয়েছিলেন। এরপর আর তাঁকে ফিরে তাকাতে হয়নি। বাংলা দলে নজর কেড়েছেন। একইসঙ্গে অনূর্ধ্ব ১৯ জাতীয় দলেও দাপিয়ে খেলেছেন পূজ়া। সিনিয়র জাতীয় শিবিরেও ডাক পেয়েছিলেন। এই পর্যন্ত সবই ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু ডান হাঁটুতে পাওয়া চোট আবার তাঁর জীবনকে এলোমেলো করে দেয়। পূজা অবশ্য হার মানার মেয়ে নন। পায়ে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছিল। অনেকদিনের জন্য মাঠের বাইরে চলে যেতে হয়েছিল। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পর কঠিন পরিশ্রম করেআবার ফিট হয়েছেন। একইসঙ্গে, পড়াশুনোও থামেনি। সেই সময় পূজার সামনে ছিল উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। সমানভাবে পড়াশুনো চালিয় গিয়েছেন তিনি। নিজের লড়াইয়ের কথা বলার সময় পূজার গলায় আত্মবিশ্বাসের সুর পরিষ্কার।  তিনি বললেন, ‘‘জীবনে বারবার পরীক্ষার মুখে পড়তে হয়েছে আমাকে। তবে এই পরীক্ষাগুলোই আমাকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করেছে। কোনওদিন কোনও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আমি হাল ছাড়িনি। কারণ আমার লক্ষ্য একটাই। অনেক বড় ফুটবলার হওয়ার। এবার জাতীয় দলের জার্সিতে কিছু করে দেখাতে চাই।’’ 





Comments